নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি রোববার সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এটি বর্তমান গতিপথ বদল করে মঙ্গলবার দেশের উপকূলে আঘাত করতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তবে ঝড়টি বর্তমান গতিপথে থাকলে আঘাত করবে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে। গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর এর নাম হবে ‘সিত্রাং’।
বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ‘সুপার সাইক্লোন’ হিসেবে সিত্রাংয়ের আঘাতের আশঙ্কা জানিয়েছিল। ঘণ্টায় ঝড়ের গতি হতে পারে ২২০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, সুপার সাইক্লোন নয়, সিভিয়ার সাইক্লোন (প্রবল ঘূর্ণিঝড়) হিসেবে আঘাত করতে পারে সিত্রাং। আঘাতের সময় গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার।
সচিবালয়ে রোববার ঘর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ক জরুরি সভায় এ কথা জানান দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি লঘুচাপ আকারে সৃষ্টি হয়েছিলো ২০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায়। এটা আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে। সেটি ধীরে ধীরে ২১ অক্টোবর দুপুর ১২টায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। ২২ অক্টোবর এটি নিম্নচাপ ও ২৩ অক্টোবর (রোববার) দুপুর ১২টায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
‘এই গভীর নিম্নচাপটির আজ সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে নাম হবে সিত্রাং।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘এর সবশেষ অবস্থান হলো ৮৮ দশমিক ৫ দ্রঘিমাংশ ও ১৬ অক্ষাংশ। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এটি ৮৭ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ ও ১৭ ডিগ্রি অক্ষাংশে পৌছানোর পরে সরাসরি উত্তর-পূর্ব দিকে টার্ন নিতে পারে। সেটি ঘটলে, একেবারে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা উপকূলীয় ১৯ জেলাতে আঘাত হানবে।
‘আর যদি এখন যে দিকে যাচ্ছে, উত্তর-পশ্চিম দিকে, সেই দিক পরিবর্তন না হলে এটা ভূবনেশ্বর ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি আঘাত হানবে ২৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার)। ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে আমাদের উপকূলে আঘাত হানার কথা বলা হচ্ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী দিক পরিবর্তন করে ঝড়টি এগোলে আমাদের ম্যাপিং অনুযায়ী উপকূলের ৭৩০ কিলোমিটার এলাকায় আঘাত করবে।
‘এটা সুপার সাইক্লোন হবে না, সিভিয়ার সাইক্লোন হবে। গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার থাকবে।’
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগরে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে জানিয়ে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত তিন বছর যেসব ঘুর্ণিঝড়হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এটার আঘাত হানার এলাকাটা ব্যাপক। এবার কিন্তু ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। যেহতু অমাবস্যা, তাই জলোচ্ছ্বাসের আশংকা বেশি।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোকে আগাম প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সব ডিসিদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। সিপিপিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রস্তুতি নিতে এবং সতর্কবার্তা প্রচার করতে। তারা মাইকিং এখনও করছে।
‘জেলা পর্যায়ের শেল্টারগুলোকে আমরা প্রস্তুত রাখতে বলেছি। গত রাতেই শেল্টারগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে থাকার সময় মানবিক সহায়তার জন্য প্রত্যেক জেলায় ১ হাজার প্যাকেট করে শুকনা খাবার, ২৫ টন চাল, ড্রাই কেক ও বিস্কুট সরবরাহ করেছি।’